দ্রব্যমূল্যের এই চরম ঊর্ধ্বগতির সময়ে আমাকে এমন একটা প্রডাক্ট দেখাতে পারবেন, যার দাম গত দশ বছরে অর্ধেকে নেমে এসেছে ?
দেখাতে পারলে, ৫০ টাকা পাবেন।
ওকে, যারা যারা পেরেছেন তারা যারা যারা পারেন নাই, তাদের কাছ থেকে ৫০ টাকা নিয়ে নিয়েন।
তবে এমন একটা প্রডাক্ট কিন্তু আসলেই আছে, যার দাম বিগত এক দশকে অর্ধেকে নেমে এসেছে। সেটা হলো গরুর চামড়া।
২০১৩ সালে এক বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ছিল ৮৫-৯০ টাকা, যা ২০২৩ এ নেমে এসেছে ৫০-৫৫ টাকায়।
বাংলাদেশে চাল, ডাল, চিনি, গরুর মাংস হইতে শুরু সকল পন্যের মূল্য আমাদের প্রতিযোগি দেশ গুলোর থেকে বেশী বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এই সময়ে গরুর চামড়ার দাম আর সব দেশে বৃদ্ধি পেলেও বাংলাদেশে মূল্য অর্ধেকে নেমে এসেছে।
কীভাবে এই উলটোটা সম্ভব হইলো?
একটাই কারণ- মার্কেট পাওয়ার। বাজারের কিছু অলিগার্ক তাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজ ইচ্ছে মত বিভিন্ন পন্যের দাম নির্ধারণ করতে পারে। এরা তাদের মুনাফার জন্যে যেই পন্যটা বিক্রি করতে যাবে, সেইটার দাম বেশি নির্ধারণ করতে পারে। আবার এরা যে পণ্যটা কিনতে যাবে, তখন সেইটার দাম কমায় আননে পারে।
শব্দটা সিন্ডিকেট না। সিন্ডিকেটের খুব স্পেসিফিক একটা মিনিং আছে। কিছু ব্যবসায়ী একত্র হয়ে গোপনে একটা পন্যের দাম নির্ধারণ করে, বা সিদ্ধান্ত নেয় যে নির্দিষ্ট একটা দামের নীচে তারা বেচবে না, বা গরুর চামড়ার ক্ষেত্রে নির্ধারণ করে যে একটা দামের উপরে তারা যাবেনা- তখন সেইটাকে বলে সিন্ডিকেট।
শুনতে মনে হইতে পারে, গরুর চামড়ার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেশান কাজ করতে পারে। কিন্তু, সেইটা সিন্ডিকেশান না, ইস্যুটা মার্কেট পাওয়ারের।
সিন্ডিকেটের ক্ষেত্রে বাজারে সুনির্দিষ্ট কিছু ক্রেতা থাকবে, যাদের বাহিরে কেউ এই ব্যবসাটা করতে পারেনা।
গরুর চামড়ার ব্যবসায় বিষয়টা সেইটা না। যে কেউ চাইলে এই ব্যবসা শুরু করতে পারে, চামড়া কিনে স্টক করতে পারে। প্রসেসিং করতে পারে। এইখানে কোন লাইসেন্সিং নেই।
এরা সবাই সবাইকে চেনে না। এমন নয় যে এরা সকলে মিলে এক সাথে বসে দাম নির্ধারণ করতেছে। ফলে বোঝা যাচ্ছে গরুর চামড়ার মূল্য কমানোর প্রসেসটা সিন্ডিকেশান না।
এইটা মার্কেট পাওয়ারের ইস্যু। অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রাইসটাকে বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বাড়ায় নেয় বা ক্রয়ের ক্ষেত্রে কমায় নেয়। কিভাবে এই অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান, যাদেরকে আমি অলিগার্ক বলতেছি, এইটা করতে পারে ?
ধরেন এই প্রতিষ্ঠান গুলো সরকারের সাথে বসে আইন করলো যে গরুর কাচা চামড়া রপ্তানি করা যাবেনা।
ব্যাস খেলা শেষ।
ফলে যদি রপ্তানির সুযোগ না থাকে এবং যদি কোরবানির সিজনে -যখন দেশের ৫০% চামড়া উতপাদিত হয়, ম্যানুফাকচারার, যারা খুব ছোট্ট একটা গ্রুপ, প্রক্রিয়াজাত চামড়া না কেনে, তবে এই গরুর চামড়া পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে।
সেই ক্ষেত্রে কোরবানির সিজনে চামড়ার দাম এমন পর্যায়ে নেমে আসবে যে, চামড়া বিক্রয় করার চেয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলা ভালো হবে।
২০১৯ থেকে '২১ এ তাই হয়, তার ফলে অনেকেই চামড়া বিক্রয় না করে মাটিতে পুঁতে ফেলে।
কিন্তু সেইটা হইলে তো লস, কারন এই ব্যবসায়িরা চায় সাপ্লাই থাকুক। ফলে, তারা বাজারে তাদের ক্রয়ের ম্যাকানিজমটা এমন ভাবে সেট করে যেন প্রান্তিক ব্যবসায়িদের জন্যে চামড়া সংগ্রহ, প্রসেসিং ও বিক্রয়ে মিনিমাম একটা লাভ থাকে। যার ফলে কেউ চামড়া মাটিতে পুঁতে না ফেলে, আবার দাম যেন এতটুকুও বেশী দিতে না হয় যার জন্য তার এক টাকা বেশী খরচ হতে পারে।
যে প্রসেসে তারা মার্কেটের এই প্রাইসটাকে নির্ধারণ করতে পারে এবং যে ক্ষমতা তাদের এই প্রসেসটা তৈরি ও নিয়ন্ত্রনের সক্ষমতা দেয় তা-ই হচ্ছে মার্কেট পাওয়ার। এইটা সিন্ডিকেশানের মাধ্যমে প্রাইস নির্ধারণ নয়। এইটা আরো অনেক সফিস্টিকেটেড একটা প্রসেস, যাতে সরকার, বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের আমদানি রপ্তানি নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশান,ট্যানারস এসোসিয়েশান, লেদার গুড ও ফুটওয়ার এক্সপোর্ট এসোসিয়েশান সহ বিভিন্ন ধরনের এসোসিয়েশান জড়িত।
গরুর চামড়ার ক্ষেত্রে এই মার্কেট পাওয়ার ব্যবহার করে অলিগার্কেরা চামড়ার মূল্য কমায় নিয়ে আসছে, চিনির ক্ষেত্রে এইটা ভারতের তিন গুণ করে নিয়েছে।
এরা সফিস্টিকেটেড এই জন্য যে, এই মার্কেট পাওয়ার নিয়ন্ত্রক অলিগার্কেরা সমাজের চিন্তা ফলো করতে পারে। তারা সাধারণ মানুষের সাইকিতে সিন্ডিকেট নামের একটা সিম্পল টার্ম ঢুকিয়ে দেয়, যার ফলে সাধারণ মানুষ শুধু মাত্র তার সামনের যে উপস্থিত তাকে দেখে। কিন্ত, আড়ালে যে একটা সফিস্টিকেটেড প্রসেসে তারা প্রাইসকে সাপ্রেস করে, বা ভারতের তিন গুণ বানায়, সেই প্রসেস নিয়ে আলোচনা সামনে আসতে দেয় না।
এরা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের একটা ভিজুয়াল রুপ দেখানোর জন্যে ভোক্তা নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর নামের প্রতিষ্ঠানকে সাজায় রাখে যেন মানুষ চিন্তা করে যে সরকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করতে কাজ করছে- যেখানে এই মার্কেট পাওয়ারের সফিস্টিকেড প্রক্রিয়া এই অধিদপ্তরের চিন্তা কাঠামোর উপরে।
যেমন ২০১৯ থেকে চামড়ার দাম নিয়ে সামাজিক ভাবে সমালোচনা শুরু হয় এবং অনেকেই চামড়া পুঁতে ফেলা শুরু করে। এই প্রসেস টা ঠেকাতে ২০২২ এ ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। কাচা চামড়ার পশম ছড়িয়ে তাতে সামান্য কেমিকেল মিশ্রণ করে সংরক্ষণের পর যে চামড়াটি তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ওয়েট ব্লু চামড়া। ওয়েট ব্লু চামড়াকে কাঁচা চামড়া হিসেবেই দেখা হয়।
২০২২ এ অল্প কিছু প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানির অনুমতি দিয়ে সামাজিক সমালোচনাটা ঠেকানো হয়। কিন্তু ২০২২ এ সেই সামান্য পরিমান ওয়েট ব্লু রপ্তানির সুযোগটাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোন নিষেধাজ্ঞা নয়, বানিজ্য মন্ত্রনালয় জাস্ট অনুমতি দেওয়া বন্ধ করে দেয়।
কেন অনুমতি দেওয়া বন্ধ করেছে বানিজ্য মন্ত্রণালয়?
ট্যানারস এসোসিয়েশানের বাধার কারণে।
ট্যানারস এসোসিয়েশানের সদস্য কারা ?
মূলত রপ্তানিকারকেরা।
এবং বানিজ্য মন্ত্রনালয় আরো নিয়ম করেছে,
বাংলাদেশ থেকে ওয়েট ব্লু রপ্তানি করতে অনুমতি নিতে হবে। ফলে অনুমতি নেওয়ার প্রক্রিয়াটাই অলিগার্কদের মার্কেট নিয়ন্ত্রন করার প্রধান টুল।
একই সাথে দেশীয় পন্য উৎপাদন, দেশীয় শিল্প রক্ষা, দেশীয় কর্ম সংস্থান ইত্যাদি বিষয়ে জনমানুষের শিল্পায়ন দেখার বাসনাটাকেও তারা উইপোনাইজ করে।
এইটা আলাদা ভাবে কোন একটা সিন্ডিকেশানের প্রাইস নির্ধারণ না। এইটা একটা সফিস্টিকেটেড প্রক্রিয়া যাতে তারা একই সাথে জনমানসের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রন করে, বাজারের সাপ্লাই চেইনটাকে নিয়ন্ত্রন করে, সুদের হার নিয়ন্ত্রন করে, সরকার ঘোষিত প্রাইস নিয়ন্ত্রন করে- করে মেক সিউর করে যে প্রাইস টা এমন পর্যায়ে থাকবে যেন সাধারণ মানুষ চামড়া পুৃঁতে ফেলার মানসিকতা না রাখে আবার দাম এমন একটা পর্যায়ে থাকে যেন সাপ্লাই চেইনের বিভিন্ন লেভেলের ব্যবসায়িরা না খেতে পেয়ে না মারা যায়, বা ব্যবসা ছেড়ে না দেয়- তারা যেন ব্যবসাটা ধরে রাখে- তাদের জন্যে চামড়ার সরবরাহটা চালু থাকে।
যেইটা ইনট্রেসটিং তা হইলো '১৯ থেকে '২১ এর চামড়ার দাম যখন এমন লেভেলে চলে আসলো, যে মানুষ চামড়া পুঁতে ফেলা শুরু করলো, তখন তারা সেই সামাজিক ধাক্কাটা ঠেকাইতে বানিজ্য মন্ত্রণালয়কে দিয়ে ওয়েট ব্লু রপ্তানির অনুমতি দেওয়াইলো।
২০২১ এর ৫ টা প্রতিষ্ঠানকে শুধু মাত্র ২ কোটি ওয়েট ব্লু রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। এই খানেও নিয়ম করে দেওয়া হয় যে, এসোসিয়েশানের মেম্বার না হইলে এই অনুমতি দেওয়া হবেনা।
২০২২ এর জুলাইয়ে ৭টা প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেওয়া হইলেও , '২২ এর সেপ্টেম্বার থেকে অনানুষ্ঠানিক ভাবে ওয়েট ব্লু রপ্তানির অনুমতি বন্ধ করে দেওয়া হয় (প্রথম আলো, ৩০ ডিসেম্বার ২০২২)।
অর্থাৎ অফিসিয়ালি অনুমতি আছে কিন্তু কাউকে রপ্তানির পারমিট দেওয়া হচ্ছেনা।
ফলে আমরা দেখতেছি, খুব সফিস্টিকেটেড একটা প্রক্রিয়া জনমানসের চিন্তা নিয়ন্ত্রন, বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের অনুমতি, কোটা সহ বিবিধ টুলস ব্যবহার করে নিশ্চিত করা হয়েছে যে কাঁচা চামড়ার দাম এমন একটা লেভেলে থাকবে, যে লেভেলে সাধারণ মানুষ চামড়া পুঁতে ফেলবেনা, নূন্যতম মূল্যে বিক্রয় করে দেবে আবার অন্য দিকে সাপ্লাই চেইনের বিভিন্ন স্তরে ব্যবসায়িরা না খেয়ে মরে যাবেনা, বা ব্যবসা ছেড়ে দেবেনা। অর্থাৎ, সরবরাহ ব্যবস্থা চালু থাকবে ।
এরা জন মানসে দেশীয় শিল্পায়ন সহ বিভিন্ন চিন্তা কাঠামোর ভিত্তিতে এই মার্কেট পাওয়ারের পেছনে থাকা অলিগার্কদের একটা জনহিতৈষী কর্ম সংস্থান সৃষ্টিকারক উপকারি শ্রেণী হিসেবে সমাজে পরিচিত করে- এবং সিন্ডিকেশান নামের একটা বায়বীয় ধারনা সমাজে উপস্থিত করে, যেন এই অলিগার্কদের প্রকৃত এক্টিভিটি আড়ালে থাকে।
এইটাই হচ্ছে মার্কেট পাওয়ার। এদের নিয়ন্ত্রনের কারনে এক দিকে চামড়ার দাম ১০ বছর পূর্বের চেয়ে কমে নির্ধারিত হয়, অন্য দিকে চিনির দাম ১৪০ টাকায় চলে যায়, যেখানে ভারতে চিনির মূল্য ৫০ টাকা।
তবে যেটা কনসিস্ট্যান্ট তা হচ্ছে এন্ড কনজিউমারদেরকে যে সকল পর্যায়ে ঠকানোর সুযোগ রয়েছে তার প্রতিটা পর্যায়ে তাদেরকে চরমভাবে ঠকানো হচ্ছে এবং সরকার এই ঠকানোর প্রক্রিয়াতে নীতিগত সহায়তা দিচ্ছে।
এন্ড কনজিউমার যখন কিনতে যাচ্ছে, তাকে প্রতিযোগী দেশগুলো থেকে বাড়তি মূল্য দিতে হচ্ছে। এন্ড কনজিউমার যখন একটা কি দুইটা প্রোডাক্ট বিক্রয় করতে যাচ্ছে যেমন গরুর চামড়া- তখন মার্কেট পাওয়ার ব্যবহার করে মার্কেটের প্লেয়াররা সরকারের সহায়তায় মূল্য কমায় এমন পাতালে নিয়ে আসতেছে যে, সেই পর্যায়ে তার জন্য চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলাটাও বেশি লাভজনক।
এইটার প্রমাণ দেখবেন আপনি সরকারি চামড়ার মূল্য নির্ধারণে।
সরকারি হিসেবে চামড়ার দাম কমেছে ১০ বছরে অর্ধেক (৯০ টাকাটা ৫০ টাকা নেমে এসেছে)। এই মূল্যটা কিন্তু আপনার মূল্য নয় বরং, পাইকারি আরত থেকে ট্যানারি কে বিক্রয় করার মূল্য।
অন্যদিকে এনড কনজিউমার লেভেলে গরুর চামড়ার দাম কমেছে দশভাগের একভাগ । ২০১৩ সালে কোরবানির শেষে গরুর যে চামড়াটি আপনি পনেরশো টাকায় বেচতে পারতেন সেটা এখন আপনাকে ১৫০ টাকা বা ২০০ টাকায় বিক্রয় করতে হচ্ছে।
ফলে সরকার কিন্তু আরতদেরকে একটা মিনিমাম প্রটেকশন দিচ্ছে। এবং চামরার আরতরা কিন্তু ভালোই প্রফিট করতেছে। কিন্তু আপনি একজন কনজ্যুমার হিসেবে (এক্ষেত্রে প্রান্তিক বিক্রেতা হিসেবে) চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন এবং আপনার বিক্রয়ের ফলে যে মাদ্রাসাগুলোর দুই মাসের খাবারের খরচ জুঠতো, সেটার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।
ফলে কমদামের কারণে আপনি যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেখানে কিন্তু আরতারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না কারণ তারা একটা মিনিমাম মূল্য পাচ্ছে টানারীদেরকে সরকারি মূল্যে বিক্রয় করার সময়।
অন্যদিকে আরতদের কাছ থেকে ক্রয় করার সময় ট্যানারি গুলো, একটা ফিক্সড প্রাইসের প্রটেকশন পাচ্ছে, যে প্রাইসটা প্রতিযোগী দেশদের থেকে অনেক কম।
এই অবস্থায় কিন্তু কাঁচা চামড়া পাচার হয়ে যাওয়ার কথা। কারণ ভারতে কাঁচা চামড়ার দাম বাংলাদেশ থেকে অনেক বেশি।
কিন্তু, ট্যানারির মালিকেরা বিডিআর এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কড়াকড়ি ভাবে বর্ডারে নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেছে যেন চামড়া পাচার না হয়ে যায়।
অন্যদিকে ট্যানারি গুলো সরকারি অদক্ষতার কারণে এবং অব্যবস্থাপনার কারণে সাভারে তাদের ফ্যাক্টরি সরিয়ে নেওয়ার পরে ব্যবসা হারিয়েছে। কারণ, ইটিপি প্লান্ট স্থাপন করার অমার্জনীয় সরকারি ব্যর্থতার কারণে ইন্টারন্যাশনাল লেদার গ্রুপের সার্টিফিকেসন করতে পারে নাই। ফলে তাদের প্রোডাক্টের বিক্রয় মূল্য কমেছে। তারা নন কমপ্লায়েন্ট হয়ে যাওয়ার কারণে গ্লোবালি যেই দামে বিক্রি করতে পারার কথা সেই দাম তারা পাচ্ছে না। বরং নন-কমপ্লায়েন্ট হওয়ার কারণে তাদের কাছ থেকে কম দামে ভারতীয়, চাইনিজ বা ভিয়েতনামি কোম্পানিরা পণ্য কিনে নিচ্ছে।
চট্টগ্রামের টিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত মাফ লেদার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কমপ্লায়েন্ট ফ্যাক্টরি নির্মাণ করার কারণে আন্তর্জাতিক মূল্য পাচ্ছে কিন্তু ঢাকার ট্যানারি গুলো সাভারে নন কমপ্লায়েন্ট সিচুয়েশনে থাকায় আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্ট মূল্য পাচ্ছে না।
ফলে তাদের incentive নাই আরো বেশি মূল্যে চামড়া ক্রয় করার। কারণ তাদের বিক্রয় মূল্য কম।
ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি মূলত সরকারি অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং অদক্ষতার পরিণতিতে গরুর চামড়ার মূল্য পতন হয়েছে।
এবং পরিনামে যে সংকট হয়েছে, সেটা থেকে ঠিকা দিতে সরকার ক্রমাগতই বছর বছর গরুর চামড়ার নিম্ন মূল্য নির্ধারণ করতেছে। ক্যাপিটালিজমের কবিরা গুনাহ প্রাইস নির্ধারণ করে এবং বর্ডার সিল করে সরকারকে সেই প্রাইস কে প্রোটেক্ট করতে হচ্ছে।
আমি অর্থনীতির একজন ছাত্র। অর্থনীতির সকল শাখা পরিশাখাতে আমার নিজস্ব আমার লেখাপড়া আছে। আমি এই পরিস্থিতির সঠিক কোন অর্থনৈতিক পরিশব্দ পাইনি। কারণ বাংলাদেশের মত পৃথিবীর কোন দেশে ফ্যাসিজমের রূপ ধারণ করে মাফিয়া তন্ত্র এইভাবে স্থাপিত হয় নাই। ফলে অর্থনীতিবিদ্যায় এই ধরনের পরিস্থিতিকে ডিল করতে হয় নাই। ক্রনি ক্যাপিটালিজম হিসেবে চিহ্নিত করলেও এই পরিস্থিতির পূর্ণ ব্যাখ্যা হয় না; পার্শিয়াল ব্যাখ্যা হয় মাত্র।
আমি এটাকে বলি চোষণ-চোষণ অর্থনীতি।
এ প্রক্রিয়ায় একটা অদক্ষ লুটেরা দুর্নীতিবাজ সরকার দেশের মানুষের কাছ থেকে প্রফিট চুষে নিয়ে অল্প কিছু ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেয়। এই প্রক্রিয়াতে ইনোভেশন বন্ধ হয়ে যায়, নতুন উদ্যোক্তার আগমনের কোন ইনসেন্টিভ থাকে না, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হারিয়ে যায়, ইনস্টিটিউশনালি শক্তিশালী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কোনোমতে নিজেকে টিকিয়ে রাখে,
সাধারণ মানুষ দরিদ্রতর হতে থাকে, ব্যবসায়ীদের ন্যূনতম মুনাফা সংরক্ষিত হয় কিন্তু সার্বিকভাবে সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
গত দুই দিনের গরুর চামড়ার মূল্য পতনের বিষয়ে গভীর স্টাডি করে এটাই আমার সার্বিক মূল্যায়ন। এই চোষণের কারণেই আপনার কোরবানি দেওয়া গরুর চামড়ার দাম দিনে দিনে কমে ১৫০০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় নেমে এসেছে।
এইটা একটা কমপ্লিকেটেড, সফিস্টিকেটেড প্রসেস যা বাংলাদেশে সম্ভব হয়েছে ২০১৩ এর পর অনির্বাচিত একটি শক্তি ক্ষমতায় আসার কারনে। এবং এই মার্কেট পাওয়ার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান মার্কেটের উপরে যে কনট্রোল তারা তৈরি করেছে সেইটাকে ধরে রাখার জন্যে ও আরো বেশি নিয়ন্ত্রন নেওয়ার জন্যে এই সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে।
এই চোষণ প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি হয়ে গরুর চামড়ার দাম বৃদ্ধির একমাত্র উপায় বা প্রথম স্টেপ হল এই এই অদক্ষ দুর্নীতিবাজ, প্রাইস মেকানিজম এবং সিন্ডিকেট করা সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামানো।
এই লেখাটা শেয়ার করার অনুরোধ থাকলো ।
সবাইকে ঈদ মোবারক।
is it regulatory capture ?
শেয়ার করেছি ভাই। একদম সঠিক এনালাইসিস