সালাম, জিয়া হাসান বলছি।
অনেক দিন পর লিখতে বসলাম। একটি বিষয়ে এতো গভীরে ঢুকতে হয়েছে যে, একটি পর্যায়ে কী লিখবো, কোন এঙ্গেলে লিখবো সেই প্রশ্নে রীতিমত খেই হারিয়ে ফেলেছিলাম। ১৫ দিনের এনালিসিস প্যারালিসিসের জড়তা ফেলে আজকে লিখতে বসলাম।
বিষয়টি নতুন কিছু নয়- আলোচিত আদানির গোড্ডা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প।
আদানির এই প্রকল্পের আলোচনার ডিসকোর্সটি রাষ্ট্রপক্ষ এমন ভাবে সেট করেছে, যে দেখে মনে হবে কিছু মানুষ এনার্জি মিক্স, এনার্জি পলিসি ও সম্পদের সীমাবদ্ধতার বাস্তবতা অনুধাবন করতে না পেরে অযাচিত ভাবে সরকারের সমালোচনা করেছে। ডয়েচ ভ্যালির খালেদ মহিউদ্দিন জানতে চায় টকশোতে জোনায়েদ সাকি এবং মোহাম্মদ এ আরাফাতের বিতর্কে মোহাম্মাদ এ আরাফাতের বক্তব্য এই দৃষ্টিভঙ্গির চমৎকার একটি উদাহরণ হতে পারে। কারণ, এই টকশোতে আমরা দেখতে পেয়েছি, মোহাম্মদ এ আরাফাত বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত ধ্বংসের সব চেয়ে বড় এভিডেন্স গুলোকেই সরকারের সব চেয়ে বড় যোগ্যতা হিসেবে দেখিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের মূল যুক্তি
এই বিতর্কে মোহাম্মদ এ আরাফাত বারে বারে একটি যুক্তিতে ফিরে এসেছে যে,
“এই উত্তরটা তো কেউ দিতে পারলো না আমাকে---অথচ ভারতের মাটি ব্যবহার করে, ভারতের কোম্পানিকে দিয়ে ইনভেস্ট করিয়ে, ভারতে কয়লা পুড়িয়ে আমি কম্পিটিভ প্রাইসে ১৬ টাকায় বিদ্যুৎ এনেছি, আমাকে একটু হিসেব করে ১৬ টাকার কমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেখান, তারপরে বাকি কথা বলেন“।
এই যুক্তিটি শুধুমাত্র মোহাম্মাদ এ আরাফাত দেন নি, গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে ডেইলি স্টারের মেইলের উত্তরে এবং বিবিসিকেও আদানি পাওয়ারের প্রতিনিধিরাও বলেছেন যে, আদানি পাওয়ারের ক্যাপাসিটি চার্জ, চুক্তির শর্ত, বিক্রয় মূল্য রামপাল, এস আলম ও মাতারবাড়ির মতো বাংলাদেশের অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে একই কথাটি বলেছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি কিন্তু ভুল নয়
বিগত এক মাসে, সংবাদপত্রে, টকশোতে এবং এমন কি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আদানির প্রকল্প নিয়ে যাহাই লেখা হোক না কেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, মোহাম্মদ এ আরাফাত ও আদানির রিপ্রেজেন্টেটিভের যুক্তিটি কিন্তু শেষ পর্যন্ত সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। বিপিডিবির কাছ থেকে পাওয়া সর্বশেষ হিসেব থেকে আমরা জানতে পেরেছি, আদানির প্রকল্পের বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি মূল্য রামপাল, বা এস আলমের বাশখালি ও পায়রার সাথে কম্পিটিটিভ।
যদিও জানুয়ারির শুরুতে আদানির ৪০০ ডলার কয়লার দাম ধরে বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণের কারণে বিপিডিবির হিসেবে আদানির বিদ্যুতের মূল্য ২৪ টাকায় (শেয়ারবিজ, ২২ জানুয়ারি ২০২৩) প্রাক্কালন থেকেই বিতর্কের সাম্প্রতিক সূত্রপাতটি ঘটে। কিন্তু, বিভিন্ন নেগোসিয়েশানের পর, গত ১১ মার্চ দৈনিক শেয়ার বিজের একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে, যে রিপোর্টে পিডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে কয়লার দামের হিসেবে আদানির প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য পরবে ১৫ টাকা ( শেয়ারবিজ, ১১ মার্চ) । শেয়ার বিজ আরো জানায়, ৪০০ ডলারের পরিবর্তে ১৪৩ ডলার কয়লার মূল্য নির্ধারণ করায় বিদ্যুতের মূল্য ২৪ টাকা থেকে ১৫ টাকায় নেমে এসেছে। একই ধরনের রিপোর্ট বিবিসিতেও প্রকাশিত হয় যে, আদানির বিদ্যুতের মূল্য প্রতি ইউনিটে ১৬ টাকার উপরে পরবে না।
চিত্র ১। ২২ জানুয়ারি ২০২৩ এ বিপিডিবির সূত্র অনুসারে শেয়ার বিজের রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, আদানির বিদ্যুতের মুল্য পরবে ২৪.২৯ টাকা।
চিত্র ২। ১১ মার্চ ২০২৩ এ, বিপিডিবির সূত্র অনুসারে শেয়ার বিজ জানিয়েছে বাংলাদেশের বিদ্যুতের দাম ১৫ টাকা রাখবে।
চিত্র ৩। একই রিপোর্টে শেয়ার বিজ জানিয়েছে, ৪০০ ডলার কয়লার দাম থেকে আদানি সরে এসেছে, এখন কয়লার দাম হবে ১৪৩ ডলার।
ফলে, দেখা যাচ্ছে ডয়েছে ভ্যালিতে বিগত ৩ মার্চে জোনায়েদ সাকির সাথে বিতর্কে মোহাম্মাদ এ আরাফাত যে দাবী করেছেন, বা বিদ্যুৎ প্রতি মন্ত্রী ও আদানির প্রতিনিধি এতো দিন যা বলে এসেছে যে, আদানির থেকে ক্রয় করা বিদ্যুতের মূল্য, দেশীয় অন্যান্য কয়লা বিদ্যুত প্রকল্পের বিদ্যুতের চেয়ে কম, বা কম্পিটিটিভ- এই দাবীটি সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। বরং আমরা যারা এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ও চুক্তির সমালোচনা করছি আমরা অনর্থক পলিসি ম্যাটার গুলো না বুঝেই বিরোধিতার জন্যে বিরোধিতার স্বার্থে আদানির সাথে এই চুক্তির সমালোচনা করছি।
বৈপরীত্যটি কোথায় ?
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের সাথে আদানির চুক্তি যদি এতই কম্পিটিটিভ হয়ে থাকে, তবে কংগ্রেস কেন ভারতের পারলামেন্টে প্রশ্ন তুললো যে, চাপ দিয়ে বাংলাদেশের সাথে এই চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে কি-না?
আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইন্সটিটিউট অফ এনার্জি ইকনমিক্স ও ফিনান্সিয়াল এনালসিস –বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যার কোন আগ্রহ নেই, সেই IEEFA কেন ২০১৮ সালেই লিখলো Adani Godda Power Project Too Expensive, Too Late, and Too Risky for Bangladesh?
এক দিকে আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলো বলছে, আদানির কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্যে অতিরিক্ত এক্সপেন্সিভ, খোদ ভারতের মাটিতেই এই চুক্তিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অন্য দিকে বাংলাদেশ সরকারের এপোলোজিস্টরা দেখিয়ে দিচ্ছেন, আদানির প্রকল্পের খরচ , বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ অন্যান্য কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাথে প্রতিযোগিতামূলক।
এটা কিন্তু প্যারাডক্স ও একটা মিস্ট্রি। আদানীর রেট বাংলাদেশের থেকে কম্পিটেটিভ কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল সংস্থা এটাকে রিস্কি ও অতিরিক্ত ব্যয়বহুল বলছে।
এই প্যারাডক্সটির মানে কি এই যে, বাংলাদেশের সব গুলো কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তিই এমন ভাবে বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী ভাবে করা হয়েছে যে, আদানির সাথে অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি চুক্তি করার পরেও, ওই চুক্তিটি বাংলাদেশের অন্যান্য কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাথে প্রতিযোগিতামূলক দেখা যাচ্ছে ?
Institute of Energy Economics and Financial Analysis এর টিম বাকলের সাথে আমার সাক্ষাৎকার
এই প্রশ্নটি আমি করেছিলাম, Institute of Energy Economics and Financial Analysis এর টিম বাকলে এর কাছে। IEEFA – জ্বালানী নিরাপত্তা, জ্বালানীর খরচ, জ্বালানীর চুক্তি গুলো যাচাই করার জন্যে অত্যন্ত দক্ষ, অরাজনৈতিক ও পেশাদার একটি প্রতিষ্ঠান এবং আমার মতে, আদানির প্রকল্পটির ভয়াবহতা বিশ্বের সামনে তুলতে IEEFA এর টিম বাকলে সব চেয়ে উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছেন। কারণ, এই টিম বাকলেই ২০১৮ সালে আদানি গড্ডা চুক্তি নিয়ে সব চেয়ে ডিটেল রিপোর্ট তৈরি করেন, যা পরবর্তীতে ওয়াশিংটন পোস্ট ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ব্যবহার করেছে।
ভারতের বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদেরাও যদি আদানির চুক্তি নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রশ্ন করেছেন বাংলাদেশকে একটি অনৈতিক চুক্তি করার জন্যে চাপ দেওয়া হয়েছে কি-না, আমার মতে তাদের ভিত্তিও ২০১৮ সালে IEEFA এর টিম বাকলের রিপোর্ট, যেখানে তিনি দেখান যে, এই চুক্তি বাংলাদেশকে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির মুখে ফেলবে, যেখানে তখন বাংলাদেশের জন্যে অন্য বিকল্প ছিল।
টিম বাকলের সাথে আমি একটি জুম মিটিং করি এবং তাকে প্রশ্ন করি, আদানী দাবী করেছে, আদানির প্রকল্পের বিদ্যুতের ক্রয় মূল্য বাংলাদেশের অন্যান্য প্রকল্পের সাথে প্রতিযোগিতামূলক, এই বিষয়ে তোমার অভিমত কি ?
টিম বাকলের উত্তর
আমার প্রশ্নের বিপরীতে টিম বাকলের উত্তর ছিল, বাংলাদেশ সরকার কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুক্তির তথ্য প্রকাশ করে না, কারণ বাংলাদেশের সব গুলো চুক্তিই গোপন চুক্তি। ফলে আদানি কীভাবে জানলো, বিপিডিবির সাথে অন্যান্য চুক্তিতে কত টাকায় বিদ্যুৎ কেনা হবে?
আমি বললাম, আদানি ও অন্যান্য সকল প্রাইভেট প্রডিউসার বাংলাদেশ সরকারের একই রাজনৈতিক বলয়ের প্রতিষ্ঠান, তারা পাব্লিকে তথ্য শেয়ার না করলেও নিজেদের মধ্যে তথ্য শেয়ার করে, যেইটা আমরা নিয়তি হিসেবে ধরে নিয়েছি।
আমার এই উত্তরে টিম বাকলে জানায়, যদি সত্যি হয়ে থাকে যে, বিপিডিবি শুধু আদানি নয় অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথেও এতো ব্যয়বহুল চুক্তি করেছে যা আদানি প্রকল্পের সাথে কম্পিটিটিভ বা কোন কোন ক্ষেত্রে মূল্য বেশী পড়েছে, তবে আমি বলবো, তোমার সরকার ডাইনে বামে দুর্নীতির মাধ্যমে, তোমার দরিদ্র জনগণকে চুষে নিচ্ছে। কারণ, আমার জীবনে আমি আদানির চুক্তির মত হাস্যকর রকম বাজে ও ভয়াবহ ব্যয়বহুল চুক্তি দেখি নাই।
কেন আদানি প্রকল্পের চেয়ে ব্যয়বহুল কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে পারে না
কেন আদানি প্রকল্পের চেয়ে ব্যয়বহুল কোন বিদ্যুৎ উৎপাদন চুক্তি হইতে পারে না, এই প্রশ্নের উত্তরে টিম বাকলে পাঁচটি যুক্তি দিয়েছে।
তার মতে এই চুক্তিটি কোন ধরনের কমারশিয়াল জাস্টিফিকেশান নাই, কারণ এই প্রকল্পে পাঁচটি মেজর খরচের বোঝা আছে, যা বিশ্বের কোন চুক্তিতে নাই। এবং, শুধু মাত্র বিপিডিবি কোন ধরনের কমারশিয়াল জাস্টিফিকেশান বাদে এই অনর্থক খরচ গুলো বহন করার গ্যারেন্টি দিয়েছে বলেই এই চুক্তিটি সম্ভব হয়েছে। নইলে, বিশ্বের কোন দেশ, কোন সংস্থা, সুস্থ মস্তিস্কের কোন মানুষ এই ধরনের কমারশিয়াল জাস্টিফিকেশান ব্যতিত চুক্তি করবে না।
এই অতিরিক্ত খরচের বোঝা গুলো হলো
১। এই চুক্তির কয়লা কেনা হবে অস্ট্রলিয়ার কারমাইকেল প্লান্ট থেকে; পোর্ট থেকে যে প্ল্যান্টের দূরত্ব ৬০০ কিমি। অস্ট্রেলিয়াতে এভারেজ মাইন থেকে পোর্টের দূরত্ব ১৫০ কিমি। ফলে এই খনি থেকে কয়লা ট্রান্সপোর্টের খরচ বেশী পরবে।
২। কারমাইকেল খনির কয়লা অস্ট্রেলিয়ার সব চেয়ে নিম্ন মানের কয়লা, এই কয়লার জ্বালানী পরিমান কম। ফলে এই কয়লার ক্রয়মূল্য বেশী পরবে। এমন কী, তাপন ক্ষমতা হিসেব করে, কয়লার মূল্য ভালো মানের সমপরিমাণ রেট ধরা হলেও, কম তাপন ক্ষমতার কারণে অধিক পরিমাণ কয়লা আমদানি করতে গিয়ে ট্রান্সপোর্ট খরচ বৃদ্ধি পাবে।
৩। অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট থেকে ভারতের অডিসা বন্দরের দূরত্ব, অন্যান্য প্রধান আন্তর্জাতিক কয়লা রপ্তানীকারক দেশ যেমন ইন্দোনেশিয়া থেকে বেশী – ফলে ট্রান্সপোর্ট কস্ট বেশী পরবে।
৪। আমদানির পর কয়লাটা পোর্ট থেকে ৭০০ কিমি রেল লাইনের মাধ্যমে পরিবহন করে ঝাড়খন্ডের গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত নিতে হবে। ভারতে আর কোন আমদানিকৃত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নেই, যা পোর্ট থেকে এতো গভীরে।
৫। বিদ্যুৎ উৎপাদন করে, আবার সেই বিদ্যুৎ ২৪৫ কিমি লাইন টেনে ট্রান্সমিশান করতে হবে।
ফলে টিম বাকলের মতে, এই চুক্তিতে আরো যে সকল অন্যায্য ধারা রয়েছে, সেই গুলো না ধরলেও এইটা অসম্ভব যে, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের খরচ বাংলাদেশের অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কম হবে। কারণ, বাংলাদেশের অন্যান্য কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এই খরচ গুলো নেই এবং পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোন দেশ এই ধরনের কমারশিয়াল জাস্টিফিকেশান ব্যতিত ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করে না।
টিমের কনফিডেন্স দেখে, আমি তাকে শেয়ার বিজের রিপোর্টের ভিত্তিতে (যেইটা পিডিবির কর্মকর্তাদের প্রাক্কলন, শেয়ার বিজ প্রকাশ করেছে মাত্র) আদানি রামপাল, এসআলম এবং পায়রার তুলনামূলক খরচটা দেখাই।
এখন অন্যান্য চুক্তি গুলো আদানির মতই এত ব্যয়বহুল হয় তবে,তুমি অফিসিয়ালি আমাকে কোট করতে পারো যে, আসলেই এই চুক্তি গুলো যারা করেছে ''দে আর আ বান্চ অফ মোরনস''। ওরা অকল্পনীয় দুর্নীতির মাধ্যমে তোমাদের দেশের দরিদ্র জনগণকে স্ক্রু করতেছে। কারণ আমার জীবনে আমি আদানির কন্ট্রাক্টের চেয়ে বাজে কন্ট্রাক্ট দেখি নাই। এই গুলো আমি বানায় বলি নাই, টিম বাকলের নিজের মুখের কথা। আমার অনর্থনীতি পডকাস্টে টিম বাকলের সাক্ষাৎকারটি আগামী দুই এক দিনের মধ্যেই প্রকাশ করবো। দেখে নিতে পারেন।
কিন্তু, টিমের এই দে আর আ বান্চ অফ মোরনস যুক্তির ভিত্তি কী ?
প্রশ্ন হচ্ছে, যেখানে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও আরাফাত সাহেব দাবী করতেছেন যে, আদানির চুক্তির চেয়ে কম দামে আর কেউ বিদ্যুৎ দিতে পারবেনা, সেইখানে টিম কেন মনে করতেছে আদানির এই চুক্তি টি বাংলাদেশের দরিদ্র ব্যক্তিদের কাঁধে ২৫ বছরের গোলামীর জিঞ্জির পরানো হয়েছে?
এর কারণ, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ও আরাফাত সাহেব আদানির বিক্রয় মূল্যের তুলনা করছেন বিপিডিবি অন্যান্য কয়লা ভিত্তিক চুক্তি গুলোর বিক্রয় মূল্যের সাথে, আর টিম বাকলে তুলনাটি করেছে ভারতের রাজ্য গুলো কি মূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয় করে এবং বাংলাদেশের আদানির সাথে চুক্তিটি করার সময়ে কি কি বিকল্প ছিল, সেই বিকল্প গুলোর সাথে।
ফলে এখানে দুইটা আলাপ।
১। বাংলাদেশ যখন আদানির সাথে ২৫ বছরের জন্যে অত্যন্ত চড়া মূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে, তখন বাংলাদেশের কাছে আর কি ধরনের বিকল্প ছিল
২। ভারতের রাজ্য গুলো কীভাবে, কী মূল্যে, কোন শর্তে কাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় করে।
আদানির সাথে চুক্তি সাক্ষরের সময়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের বিকল্প কি ছিল ?
টিমের অত্যন্ত ইন্টেরেস্টিং একটা আলাপ হইলো, ২০১৭ সালে বাংলাদেশ যখন আদানির সাথে চুক্তি করে, তখন ভারতের সোলার এবং বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলো অত্যন্ত কম মূল্যে বাংলাদেশে সোলার ও বায়ু বিদ্যুৎ বিক্রয় করতে লবিং করতেছিল- কিন্তু তাদের প্রস্তাব বাংলাদেশ সরকার আমলে নেয় নাই।
তারা বলতেছিল যে, ২০২২ নাগাদ তাদের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পাবে, ভারতে অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি তৈরি হবে। এই অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি তারা বাংলাদেশে রপ্তানি করতে চায়। টিমের আরগুমেন্ট হলো, যেহেতু বাংলাদেশ কম্পিটিটিভ বিডিং করে নাই এবং শেখ হাসিনা, নরেন্দ্র মোদী ও গৌতম আদানির মধ্যে সরাসরি আদানির চুক্তি হয়েছে, তাই ভারতের সোলার ও বিদ্যুৎ লবির সেই লবিং এ কোন কাজ হয়নি।
বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষরকারীরা দেশের দীর্ঘ মেয়াদী স্বার্থের বিপরীতে গিয়ে আদানির স্বার্থে চুক্তি করেছে।
এইটা টিম আমাকেও বলেছে এবং আইইএ এর ২০১৮ এর রিপোর্টেও লিখেছে।
২০১৮তেই টিম লিখেছিল
চিত্র ৪। ২০১৮ তে IEEFA এর রিপোর্টে দাবী করা হয়েছে, ইন্ডিয়ান উইন্ড টারবাইন ম্যানুফেকচারিং এসোসিয়েশানের সভাপতি তুলসি টান্টি দাবী করেছে, ভারতের রপ্তানিযোগ্য ৩-৫ গিগাওয়াট অতিরিক্ত বায়ু বিদ্যুৎ ক্যাপাসিটি রয়েছে, যা বাংলাদেশ আগ্রহী হলে ক্রয় করতে পারতো।
টিমের আরগুমেন্ট হচ্ছে, ভারত রিনিউবেলে সারপ্লাস এনার্জির একটি দেশ। ফলে ভারতে সোলার ও বায়ু বিদ্যুতের দাম ক্রমেই কমে আসতেছে এবং আগামী বছর গুলোতে এই বিদ্যুতের দাম আরো কমবে।
IEEFA এর ২০১৮ এর রিপোর্টে টিম দেখিয়েছে, ভারতে ২০১৭ তেই বায়ু বিদ্যুতের মূল্য ২.৪৩ রুপি ছিল (২০১৭ এর এক্সচেঞ্জ রেটে ৩.১৭ টাকা) এবং বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান গুলো বাংলাদেশকে এই মূল্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে প্রস্তুত ছিল । যদিও এই মূল্যের সাথে ট্রান্সমিশান কস্ট যুক্ত হবে। কিন্তু, টিমের আলাপ হচ্ছে ট্রান্সমিশান কস্ট যুক্ত হলেও এই খরচ, ৫ রুপির বেশী হতো না (২০১৭ এর মুদ্রা মানে ৬.৫৩ টাকা)।
অন্য দিকে, চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ে আদানির গড় ইউনিট প্রতি ট্যারিফ ৮.৭১ টাকা, যা কয়লার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে এখন ১৬ টাকায় পৌঁছেছে।
টিম বাকলের ক্রিটিকাল আরগুমেন্টটি হচ্ছে, বাংলাদেশ যদি ২০১৭ সালে ভারতের বায়ু বা সোলার বিদ্যুৎ রপ্তানি কারক প্রতিষ্ঠানের সাথে ৬ থেকে ৭ টাকায় বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করতো, সেই চুক্তিটি হতো নন ইনফ্লেশানারি। কারণ, প্রকৃতিতে সীমাহীন সাপ্লাই থাকার কারণে ও নিয়মিত ক্যাপাসিটি বৃদ্ধির কারণে ভারতে রিনিউবল এনার্জির মূল্য বছর বছর কমে আসতেছে। আবার, রিনিউয়েবল এনার্জির উৎপাদন বিশ্ব জ্বালানী বাজারের উত্থান পতনের সাথে সম্পর্কীত না। যেখানে কয়লার দাম বিভিন্ন সময়ে উঠা নামা করে। ২০১৭ এর ১৭০ থেকে ১৮০ ডলার কয়লার মূল্য ২০২২-২৩ এ ৪০০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। ফলে, রিনিউবেল ইন্ডাস্ট্রির সাথে নন ইনফ্লেশেনারী চুক্তির বদলে বাংলাদেশ আদানির সাথে ২৫ বছর মেয়াদী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেনার মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজেকে কয়লার দামের উঠা নামার ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে, যে ঝুঁকিটি নেওয়ার কোন দরকার ছিল না।
কয়লার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়াতে আদানির কাছ থেকে কেনা বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি মূল্য এখন ১৬ টাকায় পৌঁছেছে- যার ভিত্তিতে মোহাম্মাদ এ আরাফাতরা গর্ব করে দাবী করতেছেন যে, বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠান ১৬ টাকার নীচে দিতে পারবে না।
কিন্তু, টিমের আরগুমেন্ট অনুসারে বাংলাদেশ যদি ভারতের সোলার ও বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প গুলোর সাথে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করতো, তাহলে আমরা ভারতের কাছ আদানির ১৬ টাকার স্থানে ৬ থেকে ৭ টাকার মধ্যে বিদ্যুৎ কিনতে পারতাম।
চিত্র-৫। ২০১৮ এর IEEFA এর রিপোর্টে ২০১৭তে ভারতে বায়ু ও সোলার বিদ্যুতের মূল্য কমে আসার প্রজেকশানটি ও তার বিপরীতে আদানির কাছ থেকে কেনা বিদ্যুতের মূল্যের হিসেবটি দেখতে পাচ্ছি।
টিমের যুক্তিটা এইটাই যে, যে কোন হিসেবে, ২০১৭তে আদানির সাথে ২৫ বছরের এই ব্যয়বহুল চুক্তিটি করার কোন কমারশিয়াল ও স্ট্রাটেজিক জাস্টিফিকেশান নাই। বাংলাদেশ চায়লেই সহজেই বায়ু ও সোলার সাপ্লায়ারদের সাথে দীর্ঘ মেয়াদী ফ্লাট রেট নন ইনফ্লেশ্নারি চুক্তি করতে পারতো, যা বাংলাদেশের জ্বালানী নিরাপত্তাকে শুধু মাত্র শক্তিশালী করতো। একইসাথে আমাদের রিলায়েবল এনার্জি সোর্স গড়ে তোলার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় দিক- সোর্স ডাইভারসিফিকেশান করতে পারতো।
সোলার ও বায়ু বিদ্যুতের সাপ্লাই নিরবিচ্ছিন্ন নয়। এই সাপ্লাই উঠা নামা করে। টিম বাকলের আরগুমেন্ট হচ্ছে, তোমাদের যেহেতু ডিজেল জেনারেটর বা গ্যাস পাওয়ারড বিদ্যুৎ আছে, তাই তোমরা সেই গুলো ইন্টারমিটেন্ট সাপ্লাইইয়ের উঠা-নামাটা ম্যানেজ করতে পারতা। রিনিউবেলের সাপ্লাইটা এই ভাবেই ম্যানেজ করতে হয়। ভারত তাই করতেছে, তোমরাও তাই করতে। আর বাংলাদেশের জ্বালানীর চাহিদা দিনের বেলায় এবং গ্রীষ্মকালে বৃদ্ধি পায়, যে সময়ে সোলারের সাপ্লাইও বৃদ্ধি পায়। ফলে, এই লোড ম্যানেজমেন্টটা তোমাদের জন্যে সহজ হতো, এবং তোমাদের মূল্য অনেক কম পড়তো। এবং এইটাই কমারশিয়ালি জাস্টিফাইড ছিল। আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোন কমারশিয়াল জাস্টিফকেশান নেই।
এর কারণ, তোমরা কম্পিটিভ বিডিং করো নাই। তোমার প্রাইম মিনিস্টার আর নরেন্দ্র মোদী মিলে আদানির কারমাইকেল কয়লা খনিকে বাঁচানোর জন্যে ২৫ বছরের গোলামী চুক্তি করেছে।
আমি নিশ্চিত হতে চাইলাম, টিম বাকলের প্রদান করা এই তথ্যটি ঠিক কিনা যে ২০১৭তে ভারতের প্রতিষ্ঠান গুলোর রপ্তানি করার মত অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি ছিল।
আসলেই কি রিনিউবেল ইন্ডাস্ট্রি , বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সাপ্লাই করার জন্যে লবিং করতেছিল ?
বাংলাদেশের যে আদানির সাথে চুক্তি করার সময়ে সস্তায় আরো চুক্তি করার সুযোগ ছিল সেইটা নিয়ে,আমি টিমকে জোর চাপ দিলাম। তাকে প্রশ্ন করলাম, তুমি কি নিশ্চিত যে ভারতের বায়ু ও সোলার প্রকল্পে বাংলাদেশের সাথে বিদ্যুৎ বিক্রয়ের চুক্তিতে আগ্রহী ছিল? টিম আমাকে জানিয়েছে, সেই সময়ে তা পাব্লিক স্ফেয়ারে আলোচিত হয়েছিল।
সে বলেছে, এইটা তখন বেশী কিছু মেডিয়াতেই এসেছে।
দেখো ইন্ডিয়ার রিনিউবেল এনার্জি সারপ্লাস। ভারতের সোলার ও বায়ু বিদ্যুৎ ইন্ডাস্ট্রি ওভার ক্যাপাসিটিতে ভুগতেছে, ফলে তাদের জ্বালানী রপ্তানি করতেই হবে। এখন ভারতের প্রতিবেশী কোন রাষ্ট্রের এনার্জি চাহিদা বেশী ? বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশ খুব সহজেই এই অতিরিক্ত ক্যাপাসিটি ক্রয়ের চুক্তি করতে পারতো। ফলে, তারা লবিং করতেছিল, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রয় করার বিষয়ে। কিন্তু, তোমাদের প্রাইম মিনিস্টার, নরেন্দ্র মোদী আর গৌতম আদানি নিজেরা নিজেরা সিক্রেটলি ঠিক করে এই চুক্তি করেছে, ফলে, তাদের লবিং কাজে দেয় নাই।
আগ্রহী পাঠকের জন্যে ২০১৭ সালেই ভারতের রিনিউবেল এনার্জি সারপ্লাস থাকার বিষয়টি এবং বায়ু ও সোলার ইন্ডাস্ট্রির বাংলাদেশে বিক্রয়ের আগ্রহ থাকার দুইটি লিঙ্ক সংযুক্ত করলাম।
চিত্র ৬।
India can export up to 5 GW wind energy by 2022: Tulsi Tanti - The Hindu BusinessLine
মোহাম্মাদ এ আরাফাতের যে প্রশ্নের উত্তর কেউ দিতে পারলো না, তার উত্তর
ফলে, আজকে মোহাম্মাদ এ আরাফাতের প্রশ্ন - "এই উত্তরটা তো কেউ দিতে পারলো না আমাকে-- কম্পিটিভ প্রাইসে ১৬ টাকায় বিদ্যুৎ এনেছি, আমাকে একটু হিসেব করে ১৬ টাকার কমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেখান, তারপরে বাকি কথা বলেন" - প্রকৃতপক্ষে এক্টি ভুল প্রশ্ন। সঠিক প্রশ্ন হচ্ছে, ভারতের রাজ্য গুলো যেখানে ৩ টাকায় ৪ টাকায় বিদ্যুৎ কেনে, কোন ক্যাপাসিটি চার্জ ছাড়া ওভার দা নাইট চাহিদা দিয়ে বিদ্যুৎ কেনে, সেখানে আপনারা সুযোগ থাকা আপনারা কেন ৭ টাকার স্থলে, ১৬ টাকায় বিদ্যুৎ কিন্তেছেন ? কেন আপনারা বাংলাদেশের এনার্জি মিক্সকে এমন ভাবে মিস ম্যানেজমেন্ট করেছেন, বিদ্যুতের ক্রয়মূল্য ১৬ টাকা বা ২০ টাকায় গিয়েছে।
আরাফাত সাহেব কে আমার কাউন্টার প্রশ্ন
এখানে আমরা আরেকটি প্রশ্ন করতে চাই, বাংলাদেশে যখন আরাফাত সাহেবেরা ১৬ টাকায় বিদ্যুৎ ক্রয় করার গর্বে আত্মহারা হয়ে উঠেছেন তখন , ভারতের রাজ্য গুলো কিভাবে তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ থেকে ৬ টাকায় বিদ্যুৎ ক্রয় করছে। পরবর্তী চিত্রে আমি ভারতের এনার্জি এক্সচেঞ্জের ১৯ মার্চ অর্থাৎ আগামী কালের বিদ্যুতের গড় মূল্যের চিত্রটি দিলাম।
চিত্র ৭। ভারতের এনার্জি এক্সচেঞ্জে ১৯ এ মার্চে ভারতে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের মূল্য ৬ টাকা।
পূর্ববর্তী চিত্রে আপনি দেখতে পাচ্ছেন, ১৯ মার্চে ভারতের বালক বিদ্যুতের গড় দাম পরবে, ৪.৬৫ রুপি যা আজকের বিনিময় মূল্যে বাংলা টাকায় ৫.৯৬ টাকা।
ফলে আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, আরাফাত সাহেবের প্রতি আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, কেন বিপিডিবি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে ভারত থেকে প্রায় তিন গুন দামে বিদ্যুৎ ক্রয় করতেছে।
এইটা কি আরাফাত সাহেবদের বড়াই করা পলিসি গুলোরই ত্রুটি, নাকি টিম বাকলের মতে বান্চ অফ মোরনসের হাতে আমাদের জ্বালানী নিরাপত্তার ভার ছেড়ে দেওয়ার ত্রুটি , নাকি আওয়ামি লীগের ভাই ব্রাদার নেটওয়ার্ককে আনলিমিটেড প্রোফিট করিয়ে দেওয়ার জন্যে দায় যার ফলে , যে এমন কী বিশ্বের সব চেয়ে কমারশিয়ালি আন ভায়াবল চুক্তিটির চেয়েও বাংলাদেশের জ্বালানী উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এইটা একটা জরুরী প্রশ্ন যার উত্তর আমি দেবো আগামী পর্বে।
পাঠককে অনুরোধ করবো, আমাকে উৎসাহ দিতে, এই সাবস্টাকটি সাবস্ক্রাইব করতে এবং আপনার আগ্রহী বন্ধুদের লেখাটি ফোরওয়ার্ড করবেন।। এই লেখাটির যুক্তি গুলো দাঁড় করাতে, আমি দীর্ঘ সময় ধরে স্টাডি করেছি। আমার লেখালেখির একটিই ইনসেন্টিভ তা হলো, অসংখ্য মানুষের কাছে লেখা পৌঁছে দিতে পারা। কিন্তু, ফেসবুকের এলগরিদমের খামখেয়ালী নীতির কারণে (বা এমন কি রাষ্ট্রের চাপের কারণেও হতে পারে)- আমার ফেসবুকের লেখার ট্রাকশন অত্যন্ত সীমিত হয়ে পড়েছে। তাই আমি দীর্ঘ রিসার্চের মাধ্যমে প্রস্তুত করা লেখা গুলো ফেসবুকের বদলে সাবস্টাকেই লিখছি। অনেক বন্ধু আমার লেখা পড়তে চান কিন্তু, প্রযুক্তিগত ও মার্কেটিং এর সীমাবদ্ধতার কারণে আমি তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছিনা। তাই, আপনারা যদি লেখাটা ফোরওয়ার্ড করেন তবে, আগ্রহি ব্যক্তিদের কাছে আমার লেখা গুলো পৌঁছাবে।
আপনাদের উৎসাহ পেলে আমি লেখালেখির পেছনে আরো সময় দেবো, নইলে কিন্তু, আমি আবার মিউজিকে ফিরে যাবো। :p
শুকরিয়া
জিয়া হাসান
ডয়েচে ভ্যালির টকশোতে মোহাম্মাদ এ আরাফাতের প্রশ্ন গুলোর উত্তর
অসাধারণ এনালাইসিস। আপনার এই ধরণের এনালাইসিসগুলো দেশের প্রধান সারির পত্রিকাগুলোতে ছাপায় না নাকি আপনিই ছাপাতে আগ্রহী হন না? ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব ভাইয়ের লেখাগুলায় একটা ফরমাল টোন থাকে, সম্ভবত এ কারণে উনার লেখাগুলো ছাপানো হয়। আপনার লেখার ইনফরমাল টোনটা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের বুঝতে খুব সাহায্য করে। কিন্তু প্রিন্ট মিডিয়ায় এ ধরণের এনালাইসিস প্রকাশ করা গেলে আরও বহু সংখ্যক মানুষের কাছে পৌছানো যাবে।
আরেকটা কথা বস। সাবস্ট্যাক অসাধারণ জায়গা। কষ্ট করে হলেও লেখা কন্টিনিউ কইরেন। আমি মনে করি - যারা ফেসবুকে নিয়মিত লিখে তাদের সকলেরই সাবস্ট্যাক থাকা উচিত। এই বিষয়ে আমি একটা পোস্ট লিখেছিলাম (https://rb.gy/ld2oqo) - যথারীতি ফেসবুকে সেটা সামান্য কিছু মানুষের কাছেই পৌছেছে। লেখকদের ফেসবুকের পাশাপাশি সাবস্ট্যাকে লিখা উচিত এবং পাঠকদেরও সাবস্ট্যাকে পড়ার অভ্যাস করা উচিত - এভাবেই ভালো লেখার চর্চা সম্ভব।
ভালো থাকবেন!
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাছে সাধারণ ভাষায় এরকম জটিল একটা বিষয় তুলে ধরার জন্য। ভালো থাকবেন!