বৈদেশিক মুদ্রার সংকট- কেন পাকিস্তানের পথেই হাটছে বাংলাদেশ
যদিও পাকিস্তানের সংকট অনেক গভীর কিন্তু, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সংকটের প্যাটারন একই ধরনের
সালাম,
জিয়া হাসান বলছি।
কৈশোরে এবং তারুণ্যে আমার বন্ধুদের(এবং বান্ধবিদেরকেও) প্রচুর চিঠি লিখতাম। ইন্টারনেট যুগে পা দেবার পর সেই চর্চাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, আজ এই নিউজ লেটারটি লিখতে বসে সেই চিঠি লেখার স্বাদ পাচ্ছি। আমাকে এই সুযোগটা করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
শুরুতেই এই নিউজলেটারের গোল টা নির্ধারণ করা যাক- আমার উদ্দেশ্য এই নিউজলেটারটি নিয়মিত পড়ার মাধ্যমে আপনাকে অর্থনীতিবিদদের তৈরি করা নলেজ বুরোক্রেসির খপ্পর থেকে আপনাকে বের করে আনা যেন আপনি অর্থনীতি নিয়ে খুব হাই লেভেলে ইন্সাইট অর্জন করতে পারেন।
জোয়ান রবিনসনের সুন্দর একটি কোট রয়েছে ।
আমার গোলটাও একই- এই নিউজ লেটার পড়ার মাধ্যমে আপনি যেন বাংলাদেশ ও বিশ্বের অর্থনীতি নিয়ে এমন ইন্সাইট অর্জন করতে পারেন যার ফলে অর্থনীতিবিদেরা আপনাকে বোকা বানাতে না পারে এবং আপনি নিজেও ইকনমিক ইন্সাইট দেওয়ার স্কিল টা আপনার ব্যক্তি জীবনে, ব্যবসায়, এমনকি সমাজ, রাষ্ট্র ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গতি ধারা বুঝতে ব্যবহার করতে পারেন।
এখন আসুন ভনিতা ছেড়ে আলোচনায় ঢুকি। আজকের আলোচনার বিষয়-
বাংলাদেশের বর্তমান আর্থিক সংকটের প্রকৃতি কি ? কেন পাকিস্তানের অবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে নাজুক ?
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের বিষয়ে সব চেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাটি আমি পেয়েছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেনিসন ইউনিভারসিটির প্রফেসর ফাদেল কাবুবের কাছে। প্রফেসর কাবুবের জন্ম ভুমি তিউনিসিয়া এবং তাকে পোস্ট কেনজিয়ান মডারন মনিটারি থিয়োরির একজন গুরুত্বপূর্ণ চিন্তক হিসেবে দেখা হয়। উন্নয়নশীল দেশের আর্থিক সংকটের একটি সুত্র তিনি দিয়েছেন যা আমার মতে প্রেটি ইউনিক এবং যা ব্যাখ্যা করে, কেন পাকিস্তান বৈদেশিক ঋণে ডিফল্ট করেছে এবং কেন বাংলাদেশ পাকিস্তানের পদচিহ্ন ধরে আগামীতে আরো গভীর সংকটে পড়তে যাচ্ছে।
প্রফেসর কাবুব উন্নয়ন শীল দেশের বৈদেশিক দায় ভিত্তিক আর্থিক সংকট তৈরির তিনটি প্রধান কারন চিহ্নিত করেছেন।
১। এনারজি সভ্রেন্টি – জ্বালানি সার্বভৌমত্ব না থাকা।
২। ফুড সভ্রেন্টি – খাদ্য সার্বভৌমত্ব না থাকা।
৩। আমদানি ও রপ্তানির স্থানীয় ভ্যালু এডিশানের মধ্যে তুলনামূলক বৈসাদৃশ্য
প্রফেসর কাবুবের মতে , স্থানীয় ভ্যালু এডিশান যদি কম হয় এবং এনার্জি ও ফুড সভ্রেন্টি যদি না থাকে তবে একটা দেশ যতই উন্নয়ন করবে অর্থাৎ যতই শিল্পায়ন করবে, বা যতই মেগা প্রজেক্ট বানাবেন , বা যতই তার কঞ্জাম্পশান বৃদ্ধি পাবে, ততই সে আর্থিক সংকটে পড়তে থাকবে।
উনার আরগুমেন্টটা মূলধারার অর্থনীতিবিদ্যা এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফের প্রেস্ক্রিপশানে লালিত স্ট্যান্ডার্ড ইকনমিক থিওরি যেমন, শিল্পায়ন করো, কঞ্জাম্পশান বৃদ্ধি করো, এক্সপোর্ট বৃদ্ধি করো, বা ক্লাসিক কেঞ্জিয়ান যুক্তি যেমন ফুল এমপ্লয়মেন্ট বজায় রাখতে সরকারকে দিয়ে ঋণ নিয়ে হলেও বিনিয়োগ করিয়ে ইনফ্রাস্ট্রাকচার বানাও- ইত্যাদির কমপ্লিটলি কাউন্টার একটা আর্গুমেন্ট। প্রফেসর কাবুবের মতে এই চিন্তা পদ্ধতিটাই উন্নয়নশীল দেশের জন্যে একটি স্ট্রাকচারাল ট্রাপ।
আমি প্রফেসর কাবুবের একটি ইন্টারভিও নিয়েছিলাম, যে এখানে দেখতে পাবেন।
প্রফেসর কাবুবের ব্যাখ্যা
প্রফেসর কাবুবের থিয়োরির সব চেয়ে চমকপ্রদ দিক হচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশের আর্থিক সংকট তৈরির যে সিকুয়েন্স তিনি দেখিয়েছেন, বাংলাদেশের ২০২২ এর রিজার্ভ ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকট রিজার্ভ সংকট ঠিক সেই সিকুয়েন্স ধরেই এগিয়েছে এবং পাকিস্তানের গল্পটাও টাই।
প্রফেসর কাবুবের মতে একটি দেশের রপ্তানিতে যদি স্থানীয় ভ্যালু এডিশান কম হয় এবং আমদানিতে যদি জ্বালানি ও খাদ্যের মত অবশ্য প্রয়োজনীয় পন্যের পরিমাণ বেশী থাকে তবে, তবে সেই দেশ যত দ্রুত ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশান করে বা যত দ্রুত অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করে অথবা যত দ্রুত মিডল ক্লাসের বিকাশ হয়, তত দ্রুত সেই দেশ আর্থিক সংকটে পরে।
কারন নিম্ন ভ্যালু এডিশনের কারণে রপ্তানি মুখী শিল্প বা স্থানীয় শিল্প বা অবকাঠামো বিনিয়োগের প্রযুক্তি, কাঁচামাল, জ্বালানি, মেশিনারিজ, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি, মূলধনের বড় একটা অংশই ওই দেশটিকে আমদানি করতে হয়।
উৎপাদিত পন্যে যুক্ত হয় মূলত স্থানীয় এসেম্বিলি লাইন প্রডাকশনের কায়িক শ্রম। ফলে এই ধরনের নিম্ন ভ্যালু এডিশনের রপ্তানি বা স্থানীয় ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশান বা অবকাঠামো বিনিয়োগ যত বৃদ্ধি পাবে, উক্ত দেশের বাণিজ্য ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতিও ততই বৃদ্ধি পাবে।
ফলে এই ধরনের শিল্পায়ন ও বিনিয়োগের কারনে বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়ে রিজার্ভে টান পরে, যার ফলে স্থানিয় মুদ্রার বা টাকার মান হুমকির মুখে পরে। কোন দেশের টাকার মান যদি হ্রাস পায় তবে সেই প্রতিক্রিয়ায় আমদানির এলসির খরচ বৃদ্ধি পায়, যার প্রতিক্রিয়ায় কাঁচামাল, জ্বালানি, জরুরী ঔশুধ ও খাদ্য দ্রব্য সব কিছুরই দাম বৃদ্ধি পায়। ফলশ্রুতিতে একপর্যায়ে দেশে সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়, রায়ট হয়, বিক্ষোভে সরকারের পতনের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এই সংকট টা যেন না হয়, তাই সরকার দুইটা কাজ করে।
১। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দিয়ে ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেটে ডলার সাপ্লাই দিয়ে মুদ্রার একটি কৃত্রিম মান ধরে রাখে, যেন আমদানিকৃত পন্যের মুল্য কম থাকে।
২। খাদ্য দ্রব্য, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও সার সহ কিছু নিত্য প্রয়োজনিয় পন্যে সাবসিডি দেয় যেন সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে।
এই ভাবে কৃত্রিম ভাবে ধরে রাখা টাকার মানের মাধ্যমে দেশের স্থানীয় ভোগ ব্যয়, রপ্তানি ও স্থানীয় ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশান ও অবকাঠামো বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হয়।
কিন্তু, যদি আপনার দেশের রপ্তানির বড় একটি অংশ আমদানি করতে হয় এবং যদি আপনার দেশের খাদ্য ও জ্বালানি আমদানি নির্ভর হয়, তবে যতই আপনার রপ্তানি, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশান ও কঞ্জাম্পশন বৃদ্ধি পাবে, ততই বাণিজ্য ঘাটতি মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অতিরিক্ত ডলার সাপ্লাই করতে হবে, যার প্রভাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পাবে। কমতে কমতে রিজার্ভের এমন একটি অবস্থা তৈরি হবে যে আর বেশী ডলার সাপ্লাই দিলে রিজার্ভ নিঃশেষ হয়ে যাবে।
ফলে রিজার্ভের ঘাটতি মেটাতে সরকারকে আইএমএফের কাছে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকেনা।
আইএমএফের কাছে গেলে আইএমএফ কি বলে ?
আইএমএফের structural adjustment program এর ষ্ট্যাণ্ডার্ড প্রেস্ক্রিপ্সন হচ্ছে, টাকার মান মার্কেট রেটে ছেড়ে দাও, তেলের দাম মার্কেট রেটে ছেড়ে দাও, সারের ভর্তুকি বন্ধ করো, সরকারের বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম হ্রাস করো ।
সো, আইএমএফের প্রেস্ক্রিপ্সন মতে, এই অবস্থায় টাকার মানকে মার্কেটের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন উপায় থাকেনা, যার ফলে টাকার মানের বড় পতন ঘটে। এই পতনের কারণে সকল আমদানি পন্যের এলসির কষ্ট আরো এক দফা বেড়ে যায়, যার ফলে দেশের সকল পন্য ও সামগ্রীর মূল্যস্ফীতি ঘটে।
আইএমএফের structural adjustment program অনুসারে সরকার তেলের দাম এডজাস্ট করে, সারের ভর্তুকি কমায়, সরকারের খরচ কাটছাঁট করে বা বিভিন্ন ধরনের অস্টারিটি প্রোগ্রাম নেই – ফলে এই ভর্তুকি হ্রাস ও জ্বালানি মুল্যের বৃদ্ধির কারণে আরেক দফা মূল্যস্ফীতি হয় এবং একই সাথে খরচ কাট ছাট ও অস্টারিটির কারণে অর্থনীতির একটা কন্ট্রাকশান হয়।
আইএমএফের এই প্রেস্কপ্রিশানেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেনেফিট আসেনা কারন খরচ কমিয়ে আনার দরুন সরকারের আয় আরো হ্রাস পায়। এই সময়ে টাকার মান কমে আসলেও, রপ্তানি বৃদ্ধির কারনে ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে তেমন কোন সুবিধা আসেনা কারন রপ্তানিতে স্থানীয় ভ্যালু এডিশান আগে থেকেই কম।
এই ক্রাইসিস থেকে মুক্তির জন্যে অর্থনীতিবিদেরা যে ষ্ট্যাণ্ডার্ড উপায় খুজেন তা হচ্ছে- ক্লাসিক কেঞ্জিয়ান তরিকা, যার মূল বক্তব্য হলো ঋণ নিয়ে সরকারি অবকাঠামো বিনিয়োগ বৃদ্ধি করো। বিনিয়োগ বৃদ্ধি করলে, কর্মসংস্থান হবে, কর্মসংস্থান হলে তারা বেতন পাবে, খরচ করবে। যার ফলে কঞ্জাম্পশান বৃদ্ধি পাবে, উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এই প্রেসক্রিপশন অনুসারে সরকার অর্থ সর্বরাহ বৃদ্ধি করে বিভিন্ন ভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে।
কিন্তু, নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে সেই পূর্বের মত লো ভ্যালু এডিশান বিনিয়োগ, যার ক্যাপিটাল, কাঁচামাল, টেকনোলজি, জ্বালানি, ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি, ম্যানেজেরিয়াল ক্যাপাসিটি সব কিছুই আপনাকে ডলার খরচ করে আমদানি করতে হয়।
ফলে সংকট থেকে মুক্তি পেতে আপনি যতই অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করবেন বা ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশান করবেন ততই আপনার বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধি পেতে থাকবে, কারন আপনার এনার্জি সভ্রেন্টি নেই। একই সাথে কঞ্জাম্পশন বৃদ্ধির ফলেও আমদানি বৃদ্ধি পাবে কারন আপনার ফুড সভ্রেন্টি নেই।
ফলে যত আপনার এই লো ভ্যালু এডিশান অবকাঠামো বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও কঞ্জাম্পশান যতই বৃদ্ধি পাবে, ততই আপনার বৈদেশিক লেনদেন ভারসামে চাপ তৈরি হবে। সেই চাপ সামলাতে আপনাকে তত বেশী বৈদেশিক ঋণ নিতে হবে। লেনদেন ভারসাম্য পতন হওয়ার ফলে রিজার্ভ হ্রাস পাবে, যার প্রভাবে আপনার টাকার দাম আরো কমবে ও মূল্যস্ফীতি আরো বৃদ্ধি পাবে।
ফলে যা হচ্ছে তা হলো, আপনি করতেছেন শিল্পায়ন কিন্তু সেইটার বিনিময়ে পুরো দেশে ইনফ্লেশান ছড়ায় দিচ্ছেন। এইটাই প্রফেসর কাবুবের উন্নয়নশীল দেশের বৈদেশিক লেনদেন জনিত আর্থিক সংকটে পতনের সিকুয়েন্স ও লজিক।আমার মতে তার হাইপোথেসিসের সব চেয়ে চমকপ্রদ অংশ হচ্ছে, সিকুয়েন্সটা।
নাউ, প্রেটি (বিপ)আপ লজিক, রাইট ?
খুব সম্ভবত এই আরগুমেন্টটা মানতে আপনার কষ্ট হচ্ছে কারন এতো দিন আপনি জেনেছেন যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির উপায় বিনিয়োগ শিল্পায়ন, জেনেছেন রপ্তানি বৃদ্ধি পেলেই রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়, কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছেন শিল্পায়ন বৃদ্ধি পেলে সেইটা মূল্যস্ফীতি তৈরি করছে, রপ্তানি বৃদ্ধি পেলেও যদি ভ্যালু এডিশান কম থাকে বা এনার্জি সভ্রেন্টি না থাকে তবে, রপ্তানি বৃদ্ধি পেলেই রিজার্ভ বৃদ্ধি পায় না।
এখানে কাবুবের যুক্তিটার ষ্ট্যাণ্ডার্ড কেঞ্জিয়ান অর্থনীতির সাথে সাংঘর্ষিক। কেঞ্জিয়ানিজ চিন্তার মূল ফোকাস সরকারের মাধ্যমে ঋণ গ্রহন করে অবকাঠামো তৈরি করার মাধ্যমে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা যেন ফুল এমপ্লয়মেন্ট হয়। অন্য দিকে কাবুবের মতে ভ্যালু এডিশান বৃদ্ধি না করে ফুল এম্পয়মেন্টের দিকে দৌড়ালে আর্থিক সংকটে পড়তে হবে - যেই ধারা অনুসরন করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান উভয়েই ক্রাইসিসে পড়েছে - যেখানে পাকিস্তানের অবস্থা বাংলাদেশ থেকে বেশী খারাপ। ফলে, কেঞ্জিয়ান চিন্তকরে যেভাবে বলে দেন, মধ্যম আয়ের দেশ হইতে হলে বিনিয়োগের হার ২৬% থেকে ৩৪% নিতে হবে এবং সেই সুত্রের ভিত্তিতে বেসরকারি ও সরকারি খাতে ঋণ নিয়ে - বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হয়- কাবুবের চিন্তা মতে স্ট্রাটেজিকালি না করলে এই বিনিয়োগ সংকটের প্রধান কারন হয়ে দাঁড়াইতে পারে- যা আমরা পাকিস্তান ও বাংলাদেশে দেখতে পাচ্ছি। এইটা ষ্ট্যাণ্ডার্ড ম্যাক্রো ইকোনমিক মডেলের থিয়োরিটিকাল ফেইলর।
প্রফেসর কাবুব কিন্তু বলতেছেন না যে শিল্পায়ন বা রপ্তানি মুখী শিল্প করা যাবেনা। উনি বলতেছেন যে, আপনাকে হাই ভ্যালু এডিশন শিল্পায়ন করতে হবে এবং আপনাকে স্ট্রাটেজিকালি বেছে নিতে হবে কোন শিল্পে আপনি হাই ভ্যালু এডিশান অর্জন করতে পারবেন, সেই শিল্পেই আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে। একই সাথে আপনাকে জ্বালানি ও খাদ্য সার্বভৌমত্ত অর্জন করতে হবে। এমনকি, আপনি যদি লো ভ্যালু এডিশান শিল্পায়ন দিয়ে শুরু করেনও, তবুও সেই শিল্পের দ্রুত বিস্তার করার চেয়ে ওই ভ্যালু এডিশান বৃদ্ধিতে বেশী মনোযোগ দিতে হবে।
এইটাই প্রফেসর কাবুবের আমদানি ও রপ্তানির স্থানীয় ভ্যালু এডিশানের মধ্যে তুলনামূলক বৈসাদৃশ্য - নামের তিন নাম্বার পয়েন্টের সেন্ট্রাল লজিক।
প্রফেসর কাবুবের থিয়োরির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক কি ?
আমি জানি আপনাদের মাথায় এখন কি প্রশ্ন আসতেছে। সেটা হলো,
প্রফেসর কাবুবের এই থিয়োরি বাংলাদেশের জন্যে প্রযোজ্য তার প্রমান কি ?
আমরা কি এনার্জি সভ্রেন্টি এবং ফুড সভ্রেন্টি কি অর্জন করেছি?
তার মানে, কি আমাদের আর্থিক সংকটের সাথে পোশাক শিল্পের রপ্তানি বৃদ্ধির সম্পর্ক আছে? কিন্তু পোশাক শিল্পতো ৫৫% থেকে ৬০% ভ্যালু এডিশান আছে। আমাদের ফারমাসিউটিকাল শিল্পের কি অবস্থা ? অথবা, নতুন যেসব, স্থানীয় শিল্প হলো, ওয়াল্টন বা রানার বা সামসাং এর হাতে মোবাইল ম্যানুফেকচারিং, ফ্রিজ বা মোটর সাইকেলের শিল্পের বিস্তার হলো, প্রফেসর কাবুবের থিয়োরি অনুসারে এই শিল্প গুলো কি আমাদের আর্থিক সংকটে ভুমিকা রেখেছে?
এই কমপ্লেক্স আলোচনাটা আমরা আগামীতে এই নিউজলেটারে বা আমার ইউটউব চ্যানেল, অনর্থনীতি তে করবো। আশা করি, এই নিউজলেটারের সাথে সাথে আপনি আমার ইউটিউব চ্যানেলেও সাবস্ক্রাইব করবেন।
কিন্তু, আমরা একটু সহজ ভাষায় দেখি,
২০২২ এর সংকট কিভাবে প্রফেসর কাবুবের থিয়োরির পায়ে পায়ে এগিয়েছে ?
বাংলাদেশের অর্থনীতির ২০২২ এর জুন থেকে যে সংকট তৈরি হয়েছে সেইটা যদি আপনি অনুসরন করে থাকেন, তবে আপনি দেখবেন, প্রফেসর কাবুব উন্নয়নশীল দেশের আর্থিক সংকটের যে সিকুয়েন্স ও প্রক্রিয়া বলেছেন, বাংলাদেশ স্টেপ বাই স্টেপ সেই ফুটস্টেপ ধরে ধরে ঠিক একই সিকুয়েন্সে বর্তমান আর্থিক সংকটে পা দিয়েছে।
গভীরে গেলে দেখবেন, ইউক্রেইন যুদ্ধ বা আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতি নয়, বরং আমাদের নেচার অফ গ্রোথ এবং সো কল্ড উন্নয়ন এইটার পেছনে দায়ী।
আমাদের রপ্তানিতে স্থানীয় ভ্যালু এডিশান কম (পোশাক শিল্পে ৫৫% থেকে ৬২%)। অন্য দিকে, আমদানিতে ইন্টারমেডিয়ারি গুডস ও জ্বালানীর পরিমান বেশী। আমার সাথে আলাপে প্রফেসর কাবুব এই চিত্রটি ব্যবহার করেছিলেন।
বাংলাদেশের আমদানি ২০১৯
অর্থাৎ, আপনি যখনি উন্নয়ন তসবি জপতে জপতে অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবেন, যার ফলে কঞ্জাম্পশান বৃদ্ধি হবে ও ইন্টারমেডিয়ারি গুডস ও জ্বালানীর আমদানি বৃদ্ধি পাবে, তখনই আপনার অর্থনীতি ক্রাইসিসে পরবে কারন আপনার এনার্জি সভ্রেন্টি ও ফুড সভ্রেন্টি নাই।
ফলে, কোভিডের পরে যে মাত্র অর্থনীতি অপেনিং আপ করেছে, ওই বছরে আমাদের আমদানি প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলারে চলে গিয়েছে যা তার আগের বছরে ছিল ৬৫ বিলিয়ন ডলার। খেয়াল রাখবেন, ২০২১ ও কিন্তু কভিড বর্ষ নয়- রিকাভারি বর্ষ।
কিন্তু, যেটা ইন্টেরেস্টিং সেটা হচ্ছে,
দৈনিক বনিক বার্তার একটি রিপোর্টে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখিয়েছে, অর্থবছর ২০২১-২২ এর ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বানিজ্য ঘাটতি মোটেও, জ্বালানী তেল এবং খাদ্য দ্রব্যের মূল্যস্ফীতির কারনে হয়নি। বরং ইন্টারমিডিয়েট গুডসের আমদানি ছিল প্রধান ইস্যু।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিপোর্ট অনুসারে অর্থবছর ২০২১ থেকে ২০২২ এ পেট্রোলিয়ামের আমদানির পরিমান তো বাড়েই নাই বরং আমদানি এক বিলিয়ন ডলার কমেছে। যদিও এলএনজি আমদানিতে এক বছরে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, যা পূর্বের বছরের দ্বিগুণ। কিন্তু, যেটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে এই মূল্যস্ফীতির পরে, ৮ মাস বাংলাদেশ স্পট মার্কেট থেকে জ্বালানী কেনে নি। ফলে এই ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের এলএনজি আমদানির জন্যে এত বড় সংকট হওয়ার কোন কারন নেই। বাংলাদেশের সংকটের প্রধান কারন ছিল স্থানীয় ও রপ্তানি মুখী শিল্পের কাচামাল। এই বিষয়ে বনিক বার্তার রিপোর্টের ব্যবহৃত ছবিটি আমি দিচ্ছি।
খাদ্য ও জ্বালানি আমদানি রিজার্ভকে চাপে ফেলেনি (bonikbarta.net)
এই চিত্রটি থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, অর্থবছর ২০২২ এর অতিরিক্ত আমদানির উৎসটি কোথায়। বিভিন্ন পন্যের আমদানির হার বৃদ্ধিতে আমরা বুঝতে পারছি যে, ইউক্রেইন যুদ্ধের কারনে সৃষ্ট জ্বালানী ও খাদ্য মূল্যস্ফীতি নয় বরং বাংলাদেশের নিম্ন বৈদেশিক ঋণ ও সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির কারনে ভোগ ব্যয় ও ইন্টারমেডিয়াড গুডসের অতিরিক্ত আমদানি সংকটের প্রধান উৎস যা অর্থনীতির নিম্ন ভ্যালু এডিশানের স্ট্রাকচারাল সমস্যা থেকে উদ্ভুত। যদিও আমি বলছি না যে ইউক্রাইন যুদ্ধের ফলে মূল্যস্ফীতি চাপ তৈরি করেনি। অবশ্যই করেছে, কিন্তু, আমাদের স্ট্রাকচারাল ট্রাপটাই আমদানির উত্থানে বড় ভুমিকা রেখেছে।
এই প্রমান আমরা দেখতে পাই , ২০২১-২২ অর্থবছরের আমদানি পন্য গুলোর বিবরণে।
বিলিয়ন ডলার ক্লাবে দেশের পাঁচ শিল্পগোষ্ঠী | প্রথম আলো (prothomalo.com)
দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত পূর্বের চিত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের আমদানি পন্যের বড় অংশ এখন ইন্টারমিডিয়েট গুডস ও ভোগ্য পন্য। এই ভোগ ব্যয় ইন্টারমিডিয়ট গুডসের বিস্তারের পেছনে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি, মেগা প্রজেক্ট ও শিল্পের কাচামাল বড় ভুমিকা রেখেছে।
কাবুবের সুত্র মতে ডলারর দাম দীর্ঘ দিন কম রাখা হয়েছে
তাছাড়া, ২০১৩ থেকে বাংলাদেশ সরকার কৃত্রিম ভাবে টাকার উচ্চ মুল্য ধরে রেখেছে, যার ফলে এই বছর গুলোতে আমদানি সস্তা ছিল। টাকার মান বোঝার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইন্ডিকেটর হচ্ছে, রিয়াল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট। আন্তর্জাতিক সংস্থা ব্রুগেলের তথ্য অনুসারে ২০২২ এ বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের সপ্তম অতি মুল্যায়িত মুদ্রা। 'টাকার মুল্য পতন কেন অবশ্যম্ভাবী ছিল' নামের পডকাস্টটিতে আমি টাকার মুল্য ধরে রাখার প্রভাব বিশদ ভাবে আলচনা করেছি, যা এখানে দেখতে পারেন।
ব্রুগেলের হিসেবে বাংলাদেশের আরইইআর (REal Effective Exchange Rate) ২০২১ সালে ১৭২.১৫ এ পৌঁছেছে যা বিশ্বের সপ্তম সর্বোচ্চ।
কিন্তু, বাংলাদেশ ব্যাংক যথারিতি ভুল ডাটা দেখিয়ে গ্যাছে।
তো, আপনি রপ্তানি করেন এনুয়ালি সর্বোচ্চ ৫০ বিলিয়ন, আপনি টাকার দাম আরটিফিসিয়ালি কম রেখে আমদানি করতেছেন ৯০ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার।
আপনার রিজার্ভ ই তো আছে মাত্র আর ২৭ বিলিয়ন ডলার।
ঋণ করে, কত চালাবেন ? রেমিটেন্স পুরো ব্যালেন্স অফ পেমেন্টের সাপোর্ট দেয় না। ফলে, স্বাভাবিক ভাবেই টাকার মান পতন হয়েছে।
কাবুবের থিয়োরি অক্ষরে অক্ষরে অনুসরন করে অর্থনীতিতে সংকট তৈরি হয়েছে। ফলে, বাংলাদেশকে আইএমএফের কাছে হাত পাততে হয়েছে, আইএমএফ স্ট্রাকচারাল এডজাস্টমেন্ট প্রোগ্রাম দিয়েছে।
এবং, যেহেতু বাংলাদেশে একটি কতৃত্ববাদী রাষ্ট্র, তাই সংকটের দায় তারা পাব্লিকের উপরে চাপিয়ে দিয়েছে। রিজার্ভকে প্রটেক্ট করতে গিয়ে সমস্ত আমদানি বন্ধ করা দেওয়া হয়েছে। ২০২২ এর প্রথম ছয় মাসে মাসিক গড় আমদানি ছিল ৮ বিলিয়ন ডলার। এইটাকে তারা ২০২২ এর শেষে ৬ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে নিয়ে আসছে। যার ফলে সম্ভাব্য বাৎসরিক আমদানি হবে ৭২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু, সেই ৭২ বিলিয়ন ডলার ও সাস্টেনেবল না। বাৎসরিক আমদানি সরকারকে ৬০ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনতে হবে, যার ফলে মাসে গড়ে ৫ বিলিয়ন ডলারের উপরে আমদানি করা যাবেনা।
একটা ৯০ বিলিয়ন ডলার আমদানির অর্থনীতিকে যদি ৬০ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনতে হয়, তবে খাবার আমদানি বন্ধ করতে হবে, জ্বালানী আমদানি বন্ধ করতে হবে, এসেন্সিয়াল গুডস আমদানি বন্ধ করতে হবে। এবং, বাংলাদেশ সরকার এখন তাই করছে।
এতো বছর উন্নয়ন করেছেন এখন তার দায় পরিশোধ করতে তাদেরকে এখন কঞ্জাম্পশন কমাইতে হবে, কারেন্ট বন্ধ করতে হবে। বিদুতের দাম বৃদ্ধি করতে হচ্ছে, সারের ভর্তুকি কমাতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের ক্রাইসিসটা অবশ্যই কারো জটিল কারন এখানে রয়েছে, যেমন- বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে রেন্ট সিকিং এর মাধ্যমে পঞ্জি স্কিমে রূপান্তরিত করা, দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও রাজনৈতিক সংকট। কিন্তু, যদি শুধু মাত্র বৈদেশিক মুদ্রা ও রিজার্ভের সংকটটা খেয়াল করি তবে দেখা যাবে, প্রফেসর কাবুবের সুত্র মতে ক্রাইসিসটি তৈরি করেছে আমাদের সো কল্ড উন্নয়নের নেচার, যা একটি স্ট্রাকচারাল ক্রাইসিস, যার সোর্স অর্থনীতিবিদেরাই -যারা ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ক্রোড়পত্র লিখেছে এবং যারা এখনও সংকটের মূলে না গিয়ে শুধু মাত্র আমদানি, ইউক্রেইন যুদ্ধ ও ডলারের দামকে সংকটের মূল সূত্র হিসেবে দেখাচ্ছেন।
কেন পাকিস্তান একটা গভীর গাড্ডায় এবং বাংলাদেশ গাড্ডায় ঢুকতেছে মাত্র।
ফলে এখানেই একটা প্রশ্ন চলে আসে- কেন পাকিস্তান তাদের বৈদেশিক ঋণে ডিফল্ট করছে, কিন্তু বাংলাদেশ এখনো করে নাই?
আমার আরগুমেন্ট হচ্ছে, পাকিস্তান ভ্যালু এডিশান তৈরি বাদেই তাদের বিনিয়োগ ও ভোগ ব্যয় বাংলাদেশ থেকে যতটা বেশী পরিমানে বৃদ্ধি করে ফেলেছে, ততটা বাংলাদেশ করে নাই। বরং, বাংলাদেশের হাউজ হোলডের ভোগ ব্যয় পাকিস্তান থেকে অনেক কম- যদিও বা বাংলাদেশের জিডিপি পাকিস্তানের থেকে বেশী।
বাংলাদেশের ভোগ ব্যয় মূলত আরবান মিডল ক্লাসের খুব ছোট একটি অংশ এঞ্জয় করে। কিন্তু, পাকিস্তানের এই ভোগ ব্যয় এঞ্জয় করা জনগোষ্ঠীর পরিমান আরো অনেক বেশী।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়,
পাকিস্তানের ইলেকট্রিসিটির ইন্সটল্ড ক্যাপাসিটি ৪০ হাজার, বাংলাদেশের ২৪ হাজার। পাকিস্তানের বিদ্যুতের সর্বোচ্চ ব্যবহার ২৫ হাজার মেগাওয়াট, বাংলাদেশে ১৪ হাজার (এপ্রিল ২০২২)। পাকিস্তানিরা বছরে ২ লক্ষ নতুন গাড়ি ক্রয় করে, বাংলাদেশিরা করে ১৬ হাজার। আমি আরো কিছু ডাটা ঘেটে দেখছি, যা বলছে পাকিস্তানের কঞ্জাম্পশান আমাদের চেয়ে বেশী।
স্টার্ট ফান্ড নেটওয়ার্ক নামের একটা এনজিও গত বছর সার্ভে করে দেখাইছে চর অঞ্চলে চরম দরিদ্রদের ক্যাপিটা আয় ৪ হাজার, দরিদ্রদের ৫ হাজার এবং নিম্নবিত্তের ৬ হাজার।
ফলে, আমার আরগুমেন্টটা হইলো, বাংলাদেশের জিডিপিতে কঞ্জাম্পশান যা দেখানো হয় সেইটা ঠিক না। নইলে, বাংলাদেশের জিডিপি ৪৩০ বিলিয়ন আর পাকিস্তানের ৩৪৭ বিলিয়ন, এইটা হইতে পারেনা। যার থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের জিডিপির ডাটা কারসাজি করা।
আদতে, পাকিস্তানের ক্রাইসিস বাংলাদেশ থেকে অনেক গভীর। কিন্তু, প্রফেসর কাবুবের সুত্র মতে বাংলাদেশ পাকিস্তানের ফুটস্টেপ ধরেই হাটছে।
এখানে আমার আলোচনা শেষ।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছু ইন্টেরেস্টিং ঘটনা ঘটছে, যা নিয়ে আগামীতে লিখবো।
১। জনতা ব্যাংক ব্যাংক ঋণ ক্যালেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত প্রাক্তন গাড়ির চোর মোঃ ইউনুস বাদলের এননট্যাক্সের ৩৩৫৯ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে এবং সুদটি মৌকুফ করার পরে, এস আলম গ্রুপ অ্যাননটেক্সের ঋণের দায় গ্রহণ করছে।
২। মুডিজ বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের ঋণ মান হ্রাস করেছে।
৩। টিবিএসের জেবুন্নেসা আলো দেখিয়েছেন যে, বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের যে হিসেব দেখাচ্ছে, তার থেকে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমান ৪ বিলিয়ন ডলার কম হবে। মুলত একাউন্টিং কারসাজির মাধ্যমে, রিজার্ভ বাড়তি দেখানো হয়েছে। এই বিষয়ে আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিশদ আলাপ আছে।
৪। আকু পেমেন্টের পর, মার্চের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের গ্রস রিজার্ভ হবে, ৩১ বিলিয়ন ডলার। একাউন্টিং এর হিসেব পরিবর্তন ৪ বিলিয়ন, ইডিএফের ৬ বিলিয়ন, রাষ্ট্রিয় ব্যাংককে দেওয়া ২ বিলিয়ন, শ্রীলঙ্কার ঋণ ২০০ মিলিয়ন সহ আনুসাঙ্গিক খরচ বাদ দিলে, মার্চের প্রথম সপ্তাহের শেষে রিজার্ভ হয়ে দাঁড়াবে ১৯ বিলিয়ন ডলার।
৫। ফেব্রুয়ারি মাসে রেমিটেন্স পূর্বের মাস থেকে ২০% কম এসেছে।
৬। ২০২৩ এর ফেব্রুয়ারি মাসে, ২২ এর ফেব্রুয়ারি থেকে রপ্তানির পরিমান ৭.৮১% বেশী হয়েছে।
৭। বিসিইসি, ১৬৯ টা প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস ঘোষণা করেছে। এর ফলে এই প্রতিষ্ঠান গুলোর দাম দিনে ১% এর নীচে নামতে পারবেনা। যার ফলে এই প্রতিষ্ঠান গুলোর ব্যবসার অবস্থা যাই হোক, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত মানের পতন হইলেও উচ্চমানের স্টক হাতে নিয়ে সাফার করতে থাকবেন। তাদের স্টক কেউ কিনবেনা।
দারুন আর্টিকেল।
- রিসেন্টলি জিম্বাবুয়ে গোল্ড কয়েন ইন্ট্রোডিউস করে নিজেদের ইনফ্লেশন কিছুটা কমিয়েছে। বাংলাদেশেও কি সেইম মডেল সম্ভব?
- ব্রিক্স-এ জয়েন করার ব্যপারে আপনার ইনসাইট কি? ব্রিক্স-এ সম্ভবত গোল্ড বেইজড কারেন্সি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
- এছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ দেশ রিসেন্ট টাইমে গোল্ড রিজার্ভ বাড়াচ্ছে, বাংলাদেশে সেরকম কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
এই বিষয়গুলোতে আপনার আলোচনা জানতে চাই। ধন্যবাদ।
can't pass days without reading your writings, Bhaijaan... take love and great regards.